শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

কাতারে আটক ভারতীয়দেররা গুপ্তচরবৃত্তি করছিল!

কাতারে আটক ভারতীয়দেররা গুপ্তচরবৃত্তি করছিল!

স্বদেশ ডেস্ক:

গত বছরের আগস্ট থেকে কাতারের জেলে বন্দী আট ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে।

এই আটজনই ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং কাতারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে কাতারের একটি সাবমেরিন ক্রয় প্রকল্পের তথ্য ইসরাইলের কাছে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে এই ভারতীয়দের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন কাতারি নাগরিকও রয়েছেন।

এদের সকলের বিরুদ্ধে ‘ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যপ্রমাণ’ও কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে।

রিপোর্টে বলা হয়, বন্দীদের নির্জন কারাকক্ষে রাখা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী- তা এখনো প্রকাশ্য আদালতে জানানো হয়নি।

কাতার সরকারের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

অন্যদিকে ভারত সরকার এই চরবৃত্তির অভিযোগ যেমন অস্বীকার করেনি, আবার নিশ্চিতও করেনি।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি শুধু বলেছেন, এটিকে তারা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং এই আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে তারা কাতারি কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত কথাবার্তা বলে চলেছেন।

তিনি আরো জানান, ‘দোহাতে ভারতীয় দূতাবাস ওই আটক ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সাথে বরাবরই যোগাযোগ রেখে চলেছে।’

মে মাসের গোড়ায় কাতারে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে, তার আগে সরকারের পক্ষ থেকে কতদূর কী করা যায়- সেই চেষ্টাও চালানো হচ্ছে বলে বাগচি জানিয়েছেন।

তবে গোটা বিষয়টি যে ভারত সরকারকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কাতারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এর আগে গত বছর ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির তৎকালীন মুখপাত্র নুপূর শর্মা লাইভ টিভিতে ইসলামের নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পরও কাতার প্রকাশ্যে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল।

ভারতীয় নৌবাহিনীর আর একজন সাবেক সদস্য, কূলভূষণ যাদবও সেই ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তানে চরবৃত্তির অভিযোগে বন্দী রয়েছেন।

ভারত অবশ্য আগাগোড়াই বলে এসেছে, কুলভূষণ যাদবকে ইরান থেকে অপহরণ করে নিয়ে এসে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।

কাতারে কী ঘটেছিল
কাতারের ‘দাহরা গ্লোবাল’ নামে একটি সংস্থায় কর্মরত আটজন ভারতীয় নাগরিককে গত বছরের আগস্টে আচমকাই গ্রেফতার করে সে দেশের কর্তৃপক্ষ।

এই আটজনই আগে ভারতীয় নৌবাহিনীতে ছিলেন, বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে তারা ওই বেসরকারি সংস্থায় যোগ দেন।

আটকের পর থেকেই তাদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ‘সলিটারি কনফাইনমেন্টে’ বা নির্জন সেলে রাখা হয়েছিল।

কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে চার্জটা ঠিক কী, সেটা প্রকাশ্য আদালতে এখনো জানানো হয়নি।

গত ১৯ এপ্রিল ভারতের সুপরিচিত নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রভিন স্বামী ‘দ্য প্রিন্ট’ পোর্টালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানান, কাতার সম্প্রতি ইতালিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি হাই-টেক সাবমেরিন কেনার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে- তার ওপরেই এই ভারতীয়রা গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই বিশেষ ধরনের সাবমেরিনগুলো এমন কিছু ‘মেটামেটেরিয়াল’ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে, যাতে শত্রুর পক্ষে এগুলোর গতিবিধি শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব।

ইতালির ত্রিয়েস্তের একটি কোম্পানির সঙ্গে এই সাবমেরিন কেনার জন্য কাতার চুক্তি করেছিল ২০২০ সালে।

গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে স্বামী আরো জানান, ভারত বা ভারতীয়রা যে কাতারি আমিরাতের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ কোনো গোয়েন্দা কার্যকলাপে জড়িত থাকতেই পারে না, সেটা তাদের বোঝানোর জন্য অনেক চেষ্টা চালানো হয়েছে।

‘কিন্তু কাতারিরা বারবার এটাই জোর দিয়ে বলছেন যে তাদের সাবমেরিন প্রোগ্রাম নিয়ে গোপন তথ্য না কি ইসরাইলের কাছে পাচার করা হয়েছে’,- ওই প্রতিবেদনে জানান প্রভিন স্বামী।

গত ২৯ মার্চ এই ভারতীয়দের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আগামী ৩ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

এরপর মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) ভারতের আর একটি প্রথম সারির পত্রিকা ‘দ্য ট্রিবিউন’ রিপোর্ট করে, বন্দী আটজন ভারতীয়র বিরুদ্ধে কাতার এতটাই কঠোর চার্জ এনেছে যে তাদের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে শুধু এই ভারতীয়রাই নন, দু’জন কাতারি নাগরিকও অভিযুক্ত হয়েছেন বলে তাদের রিপোর্টে জানানো হয়।

এদের একজন হলেন ‘দাহরা গ্লোবাল’ কোম্পানির সিইও খামিস আল-আজমি, যিনি আগে ওমানের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।

কোম্পানিতে ওই ভারতীয়দের নিয়োগ করেছিলেন তিনিই।

অভিযুক্ত অপর কাতারি নাগরিক হলেন মেজর জেনারেল তারিক খালিদ আল-ওবায়েদলি, যিনি সে দেশের আন্তর্জাতিক মিলিটারি অপারেশনের প্রধান।

ভারতে প্রতিক্রিয়া
যে আটজন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে কাতারে চার্জ আনা হয়েছে, ভারতীয় নৌবাহিনীর সেই সাবেক সদস্যরা হলেন :

ক্যাপ্টেন নভতেজ সিং গিল
ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্র কুমার ভার্মা
ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ঠ
কমোডোর অমিত নাগপাল
কমোডোর পূর্ণেন্দু তিওয়ারি
কমোডার সুগুনাকার পাকালা
কমোডোর সঞ্জীব গুপ্তা
সেইলর (নাবিক) রাগেশ

এই সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত একজনের সাবমেরিন প্রোজেক্টে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে বলে পাবলিক রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে।

কমোডোর সুগুনাকার পাকালার লিঙ্কডইন প্রোফাইল বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি বিশাখাপত্তনমে হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ডে সাবমেরিন মেরামতের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

সাবেক ন্যাভাল কমান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারিকে দেশের প্রতি তার সেবার স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকার ২০১৯ সালে ‘প্রবাসী ভারতীয় সম্মানে’ ভূষিত করেছিল।

এই আটজন সাবেক সেনা সদস্যর পরিবারই তাদের প্রিয়জনের মুক্তির জন্য চেষ্টা চালাতে ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।

গত বছরের (২০২২) শেষ দিনে এই আটজনের মধ্যে অন্তত দুজনের ভাইবোন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে বলেন, ‘সারা জীবন তারা দেশের প্রতি অপরিসীম সেবা করে গেছেন। দয়া করে এদের কাতারের জেল থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’

তবে ভারত সরকার তাদের মুক্তির জন্য লাগাতার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও তাতে এখনো বিশেষ লাভ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

এ মাসের গোড়ার দিকেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও একবার জানিয়েছে, তারা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে এবং কাতারি কর্তৃপক্ষর সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী তখন মন্তব্য করেন, ‘দেখা যাক, এখন যেহেতু আইনি প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে, আমরা তার ওপর গভীরভাবে নজর রাখছি।’
সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877